অ্যালোভেরার উপকারিতাঃ অ্যালোভেরাকে প্রাচীন মিশরীয়রা ‘true miracle plant, অর্থাৎ সত্যিকারের অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন গাছ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন । অ্যালোভেরার পাতার জেলকে তারা তাদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে মানতো। অ্যালোভেরার উপকারিতা অনেক বেশি উলেখযোগ্য । Read more >>> কিসমিসের উপকারিতা
শুধু মিশর নয় চীনেও অ্যালোভেরা বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই । চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিরাট অংশ জুড়ে ছিল অ্যালোভেরা। দ্য স্যালভেশন বুক অফ সিন-শি-তে অ্যালোভেরাকে আশ্চর্য নিরাময়কারী উদ্ভিদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া জাপানে এই উদ্ভিদকে `Royal Plant, অর্থাৎ রাজকীয় উদ্ভিদ বলে গণ্য করা হয়। সর্বোত্তম স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এই উদ্ভিদের রস ব্যবহার করা হতো, এমনকি সামুরাইরা তাদের ত্বকে অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ম্যাসাজ করতো ।
অ্যালোভেরার উপকারিতা
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী আমাদের কাছে একটি অতি পরিচিত উদ্ভিদ। অ্যালোভেরার বাংলা নাম ঘৃতকুমারী। তবে সারাবিশ্বের মানুষ একে অ্যালোভেরা নামে চিনে। এটি একটি কান্ড বিহীন রসাল এবং শাসযুক্ত গাছ। এই গাছটি গড়ে ৬০-১০০ সেমি লম্বা হয় । পাতা ১০-২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পাতার দুই পাশে কাটা থাকে এবং পাতা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা আকৃতির ।
এই গাছের ফুলও অনেক দর্শণীয়। অ্যালোভেরার আদিবাস উত্তর-আফ্রিকা এবং কেনারিদিপুঞ্জে । ক্যারলিনিয়াস সর্বপ্রথম অ্যালোভেরার নামকরণ করেন। বহু বছর ধরে মানুষ অ্যালোভেরাকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
অ্যালোভেরার উপকারিতা
অ্যালোভেরার ১২টি অতুলনীয় উপকারিতাঃ
১/ হার্ট সুস্থ্য রাখতে অ্যালোভেরাঃ আপনার হৃদ যন্ত্রকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে অ্যালোভেরার জুস। অ্যালোভেরার কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন সাভাবিক রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দীর্ঘদিন আপনার হৃদযন্ত্র সুস্থ্য থাকে।
২/ মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে । এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায়।
৩/ দাঁতের যত্নে অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরার জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথার উপশম করে থাকে। দাঁতে কোন ইনফেকশন থাকলে তাও দূর করে দেয়। নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৪/ ওজন হ্রাস করতে অ্যালোভেরাঃ ওজন কমাতে অ্যালোভেরার জুস বেশ কার্যকরী। ক্রনিক প্রদাহের কারণে শরীরে মেদ জমে। অ্যালোভেরা জুসের অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান এই প্রদাহ রোধ করে ওজন হ্রাস করে থাকে। পুষ্টিবিদগণ এই সকল কারণে ডায়েট লিস্টে অ্যালোভেরা জুস রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৫/ হজম শক্তি বাড়াতে অ্যালোভেরাঃ হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা জুসের কোন জুড়ি নেই। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে যা হজম শক্তি বাড়িয়ে থাকে।অ্যালোভেরা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধেও অনেক ভাল কাজ করে।
৬/ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরা জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে। ডায়বেটিসের গুরুত্ব দিকে নিয়মিত এর জুস খাওয়া গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং খাওয়ার আগে ও পরে নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস পান করুন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৭/ ত্বকের যন্ত্রে অ্যালোভেরাঃ ত্বকের যন্ত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। অ্যালোভেরার অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান ত্বকের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
৮/ রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরা হল অ্যান্টি মাইকোবিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ একটি গাছ। অ্যালোভেরা জুস নিয়মিত পান করলে রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের টক্সিন উপাদান করে দূর করে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।
৯/ মুখের দূরগন্ধ দূর করতে অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরায় আছে ভিটামিন-সি, যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরার জেল মাউথ ওয়াশ এর বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
১০/ চুল সুন্দর করতে অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরার গুনাগুন বলে শেষ করা যাই না, মাথায় খুশকি দূর করতে এর কোন তুলনা নেই। এমনকি ঝলমল চুলের জন্যেও অ্যালোভেরা অনেক উপকারী। সুতরাং চুলের যত্নে অ্যালোভেরা আপনার নিত্যসংগী।
১১/ মুখের ঘা সরাতে অ্যালোভেরাঃ অনেকের মুখে ঘা হয়, আর এই মুখের ঘা দূর করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকারী। ঘায়ের জায়গায় এলভেরার জেল লাগিয়ে দিলে মুখের ঘা ভাল হয়।
১২/ ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরাঃ গবেষণা দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন, যা স্তন ক্যান্সার ছড়ানো থেকে রোধ করে। এছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যালোভেরা গুরুত্ব অনেক বেশি ।