গল্পঃ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম খুব সুন্দর ও শিক্ষনীয় গল্প। আশা করছি পড়তে পেরে ও শিখতে পেরে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। আরো পড়ুন>>> রুপকথার গল্প
গল্প
মৌমাছি ও কাঠুরিয়া
এক কাঠুরিয়া বনে গেল গাছ কাটতে। কিন্তু সে গাছ না কেটে মন খারাপ করে শুয়ে আছে একটা গাছের নিচে। ওদিক দিয়ে ভনভন করে উড়ে যাচ্ছিল একটা মৌমাছি। সে কাঠুরিয়াকে মন খারাপ করে শুয়ে থাকতে দেখে কাছে গেল। মৌমাছি কাঠুরিয়ার কাছে গিয়ে বলে-এই কাঠুরিয়া, তুমি এভাবে শুয়ে আছো কেন? কী হয়েছে তোমার? কাঠুরিয়া মোচড় দিয়ে বলে উঠল ভাই মৌমাচি, আমি খুব গরিব মানুষ। এক খন্ড জমিও নেই আমার। এই কুঠালটাই আমার সম্বল। এই বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে লাকড়ি করি, তারপর এগুলো বাজারে বিক্রি করে সাত মুখের সংসার চালাই। আজও এসেছিলাম গাছ কাটতে।
কিন্তু আমি আজ গাছ কাটা শুরু করার আগে বনের গাছের দিকে ভালো করে তাকালাম। দেখলাম, কোনো গাছে ফুল ফুটেছে, কোনোটায় ফল ধরেছে, কোনোটায় পাখিরা বসে মনের সুখে গান করছে আর ওই গাছটার মোটা ডালাটায় দেখলাম মৌমাছিরা মধুর চাক বেধেছে। ওসব দেখে আমি চিনতায় পড়ে গেলাম। ভাবছি কোন গাছটা কাটবো। অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে থেকে চিন্তা করছি আমি। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
আর গাছ কেটে লাকড়ী না করতে পারলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপোস থাকতে হবে। কী যে করি ! কাঠুরিয়ার কথা শুনে মৌমাছির খুব মায়া হলো, সে কাঠুরিয়াকে বলল তোমার কষ্টের কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু এই বনে তো নানা প্রজাতির হিংস্র প্রাণি বাস করে। যেকোন সময় তোমার বিপদ হতে পারে। তোমার ভয় করে না ? কাঠুরিয়া ক্ষুধার চেয়ে কষ্ট আর নাই। তাই জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে এখানে আসি গাছ কাটতে। মৌমাছি আচ্ছা তুমি তো অনেক গাছ কেটেছ, তো লাগিয়েছ কয়টা ? কাঠুরিয়া অনেক গাছ কেটেছি ঠিকই কিন্তু লাগাইনি একটিও। আর আমার তো জায়গা জমিন নেই।
গল্প
মৌমাছি ও কাঠুরিয়া
গাছ লাগাব কোথায় ? মৌমাছি নিজের জায়গা নেই বলে গাছ লাগাওনি তবে গাছ কাটো কার জায়গা থেকে,শুনি? একথা শুনে কাঠুরিয়া চুপ করে রইল। এবার মৌমাছি খানিকটা ধমকের সুরে বলল শোনো কাঠুরিয়া ! তুমি আর কখনো গাছ কাটবে না। গাছ কাটলে কত বড় ক্ষতি হয় তা তুমি জানো ? দেখ না, বন যে উজাড় হয়ে যাচ্ছে ! আমরা চাক বাধবো কোথায়? পশু পাখিরাই বা কোথায় থাকবে? আর গাছ না থাকলে তোমাদের কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছ কখনো ? কাঠুরিয়া বারে ! আমরাতো আর তোমাদের মতো গাছের ডালে থাকিনা। আমাদের আবার কি হবে? মৌমাছি কি হবে মানে? মারা যাবে একদম।
তুমি কি জানো, গাছ তোমাদের কত বড় বন্ধু ? এই গাছই তো জীবন বাঁচিয়ে রাখে। কাঠুরিয়া আরে, না না, আমি গরিব বলে এ বনের গাছ আমার জীবন বাঁচায়। গাছ কাটি লাকড়ি করি। আর লাড়কি বিক্রি করে জীবন বাঁচাই। কিন্তু সব মানুষ তো আমার মতো গরিব নয় যে তাদের জীবন বাঁচাবে গাছ। এরা তো গাছের দিকে ফিরেও চায় না। এখন তুমি আমাকে এগুলো কী শোনাচ্ছ, আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। একটু বুঝিয়ে বলো তো শুনি। মৌমাছি ঠিক আছে বলছি শোনো। অক্সিজেন নামের একধরনের গ্যাস আছে। এই গ্যাস ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। শ্বাস নেয়ার সময় প্রতিবারই এই গ্যাস মানুষ গ্রহণ করে। আর এই অক্সিজেন কে দেয় জানো? দেয় এই গাছ।
গল্প
মৌমাছি ও কাঠুরিয়া
সব গাছ যদি রাগ করে অক্সিজেন দেয়া কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেয় তা হলে ধনী-গরিব বলে কোন কথা নেই; সবাই মারা পড়বে। এখন বুঝতে পারছ জীবন বাঁচানোর জন্য গাছের কত প্রয়োজন ? হাত থেকে কুঠালটা ফেলে দিয়ে কাঠুরিয়া রাগ দেখিয়ে বলল, তা বুঝলাম। কিন্তু গাছ না কাটলে আমার এত বড় সংসার চলবে কীভাবে না খেয়ে ? মৌমাছি কেউ না খেয়ে মরবে না। এতদিন তো এই বনই তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এর পরেও বাঁচিয়ে রাখবে। সারাজীবন ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে তোমাকে একটা ভালো কাজ করতে হবে কাঠুরিয়া ভাই। কাঠুরিয়া কী কাজ করতে হবে আমাকে, ঝটপট বলো মৌমাছি, প্রতিদিন তোমাকে দুটি করে গাছের চারা এনে বনে লাগিয়ে দিতে হবে।
কাঠুরিয়া এতে আমার লাভ? মৌমাছি শুধু তোমারই না, এতে সবারই লাভ। তুমি বাঁচবে এবং আমরা সবাই বাঁচব। তুমি আমার কথা রাখ, তারপরে দেখা যাবে, কী করা যায়। কাঠুরিয়া ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে বাড়ি চলে গেল। পরের দিন কাঠুরিয়া মাথায় করে দুটি কাঠের চারা এনে লাগিয়ে দিল বনে। এতে বনের সবাই। খুশি হয়ে গেল। গাছেরা কাঠুরিয়াকে অনেক ধন্যবাদ দিল। এ সময় কোথা থেকে যেন ভন ভন করে চলে এলো মৌমাছি। সে কাঠুরিয়ার হাতে পাতামোড়ানো আধাকেজি পরিমাণ মধু তুলে দিয়ে বলল, মৌমাছি এই নাও তোমার পুরস্কার। প্রতিদিন এভাবে তুমি গাছ লাগিয়ে বন বাঁচাবে আমরা মধু দিয়ে বাঁচাব তোমাকে। আর সবুজ বন বাঁচাবে আমাদের সবাইকে। এবার বুঝেছ? মধু পেয়ে কাঠুরিয়া খুশিতে টগবগ করতে লাগলো। এরপর থেকে কাঠুরিয়া প্রতিদিনই কুঠালের পরিবর্তে চারাগাছ নিয়ে আসে বনে আর যাওয়ার সময় নিয়ে যায় মূল্যবান মধু। সে মধু বাজারে বিক্রি করে তার সংসার চালায়। আর বনের গাছপালা, পশু-পাখি ও মৌমাছিদের সাথে বনধুত্ব হয়ে গেল কাঠুরিয়ার।