দুঃখের মত এত বড় পরশপাথর আর নেই ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাবঃ দুঃখের স্পর্শেই মানবসত্ত্বা জাগ্রত হয়, দুঃখের পরশেই মানুষের বিবেক মহান হয় এবং সত্যিকার মনুষ্যত্ব লাভ করে।
সম্প্রসারিত-ভাবঃ সুখ-দুঃখ মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। দুঃখের পরে সুখ আসে, দুঃখ নয় – এটাই জগতের চিরায়ত নিয়ম। দুঃখ ছাড়া প্রকৃত সুখ অর্জনের বিকল্প কোন পথ নেই। মনীষীগণ দুঃখকে পরশপাথরের সাথে তুলনা করেছেন। পরশ পাথরের ছোঁয়ায় লোহা যেমন সোনায় পরিণত হয়, তেমনি দুঃখ রূপ পরশপাথরের ছোঁয়ায় মানুষের সব গ্লানি দুর হয়ে যায়। ফলশুতিতে মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা। জগতের সব সাফল্যের সাথে জড়িত আছে সুখ দুঃখ ।
দুঃখবোধ থেকেই প্রজ্ঞা বা জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে। দুঃখের দারুন দহন শেষে যে সুখ আর্বির্ভূত হয়, তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখের আগুনই মানুষের মনুষ্যত্ব ও বিবেককে খাঁটি সোনায় পরিণত করে পৃথিবীর সব মূলবান সম্পদ দুঃখের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে। বাংলা প্রবাদে আছে- কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না।
দুঃখ, কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে প্রার্থিব স্বর্ণশিখরে আরোহণ অসম্ভব। তাই কবি ররীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- দুঃখই জগতে একমাত্র সকল পদার্থের মূল। মাতৃস্নেহের মূল্য দুঃখে, পতিব্রতের মূল্য দুঃখে, বীর্যের মূল্য দুঃখে, পুন্যের মূল্য দুঃখে।
মানুষের জীবনে সুখদুঃখ পাশাপাশি বিরাজ করে । অনেকে দুঃখে ভেঙ্গে পড়ে। দুঃখবোধের যন্ত্রনায় কারও জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তুূ সাহসী মানুষ দুঃখকে মোকাবেলা করে । তারা দুঃখকে দুঃখই মনে করে না। বরং দুঃখ দেখে সুখের সাধনায় নিয়োজিত হয়। বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে দুঃখকে জয় করে সুখকে ছিনিয়ে আনে। বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি বর্গের জীবনী পর্যালোচনা করলে এ সত্যের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। রুুটির দোকানের নজরুল দুঃখ দারিদ্রদের এক নিষ্ঠূর উদাহারণ। জীবন চলার প্রতিটি পর্যায়ে দুঃখ দারিদ্র্য তাঁকে কুরে কুরে খেয়েছে। বিনিময়ে তাকে দিয়েছে প্রতিষ্ঠা ।
‘‘ হে দারিদ্র্য ! তুমি মোরে করেছ মহান তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান। ,,
মন্তব্যঃ দুঃখ মানুষের সকল জড়তা ও দৈন্য দুর করে তাকে করে সুন্দর । দুঃখের ভেতর দিয়েই মানুষ জীবন সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে সুতরাং জাগতিক সকল প্রাপ্তির পূর্বশর্ত দুঃখের পরশ। তাই কবি বলেছেন, ‘‘ কাদিস কেন মন, ভাঙ্গা গড়া এই জীবনে আছে সর্বক্ষণ; সুখের পর দুঃখ আসে, দুঃখের পর সুখ।,,