জন্ডিস থেকে মুক্তির উপায়

জন্ডিস থেকে মুক্তির উপায়ঃ জন্ডিস ইংরেজি( Jaundice ) ইক্টেরাস ( Ictetus ) নামেও পরিচিত, আসলে কোন রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস হলে বিলরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় ফলে ত্বক, স্লেকের বা চোখের সাদা অংশ ও অন্যান্য মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়। Jaundice শব্দটি ফরাসি শব্দ Jaunisse, থেকে এসেছে যার অর্থ হলুদাভ। জন্ডিস থেকে মুক্তির উপায়।  আরো পড়ুন>>>কাঁচা হলুদের উপকারিতা

আগেই যেমনটি বলেছি, রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। আমাদের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একটা সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙ্গে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে যা পরবর্তীতে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সাথে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যে কোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় আর দেখা দেয় জন্ডিস ।

জন্ডিস হলে চোখ হলুদ হয়। তবে হেপাটাইটিস রোগে জন্ডিসের পাশাপাশি ক্ষুদামন্দা, অরুচি, বমি ভাব, জ্বর, জ্বর অনুভূতি কিংবা কাঁপানি দিয়ে জ্বর আসা, মৃদু বা তীব্র পেট ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। এসব উপসর্গ দেখা দিলে তাই অবশ্যই একজন লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত ।

কিভাবে বুঝবেন জন্ডিস হয়েছে

১. চামড়া এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়।

২. প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বর্ণের হয়।

৩. লিভার প্রদাহের কারণে ক্ষুদামন্দা, অরুচি, গা বমি বমি ভাব, বমি এবং জ্বর থাকতে পারে।

৪. দুর্বলতা ও বিরক্তি ভাব দেখা দিতে পারে।

৫. জন্ডিসের কারণের উপর ভিত্তি করে অন্যান্য লক্ষণসমূহ দেখা যায়।

জন্ডিস মূলত হয় লিভারে সমস্যা হলে। লিভারে সমস্যা হলে তা রক্তের লোহিত রক্ত কনিকার হিমোগ্লোবিন ভেঙ্গে তৈরী বিলুরুবিন কে মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দিতে পারেনা। রক্তে তাই অনেক বিলুরুবিন জমে যায়। বিলুরুবিন এর রঙ হলো হলুদ। এই বিলুরুবিন ত্বকে চোখে জমে তা।

জন্ডিস থেকে মুক্তির উপায়

যেহেতু জন্ডিসে বমি হয়, এর ফলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায় । ডিহাইড্রেশন বা পানিশুণ্যতা এড়ানোর জন্য পানিয় খেতে বলা হয়। তাছাড়া, পর্যাপ্ত পানি খেলে মুত্রের সাহায্যে রক্তের অতিরিক্ত বিলিরুবিন ও বেশী নিস্কাশিত হয়ে যায়।

জন্ডিস হলে অতিরিক্ত নয় , পর্যাপ্ত পানি গ্রহন করন। দিনে তিন লিটার বা ১২ গ্লাস এর মত পানি খেতে চেষ্টা করুন। এ সময় শরীরে দুর্বলতা কাজ করে ফলে সলিড খাবার না খেলে ক্যলরি কোথা থেকে আসবে।

যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না পান করা হয় তবে প্রয়োজন খাবার স্যালাইন। বেশি বেশি খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে।

তেল এড়িয়ে চলতে হবে কারন তেল হজম করার জন্য বাইল নামক একটি পদার্থের প্রয়োজন হয় যা লিভার হতে তৈরি হয়। জন্ডিসে যেহেতু লিভার নাজুক অবস্থায় থাকে তাই একে অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার জন্য তেল এড়িয়ে চলতে বলা হয়।

জন্ডিসে এমনিতে বমি বমি ভাব বেশী হয়। এই সময় এজন্য কম মশলা খেতে বলা হয় যাতে বমি বমি ভাব কম লাগে। মশলা বেশী খেলে হলুদের ভাব আরো বাড়বে ।

এই সময় বেশী পরিমাণে মাছ মাংস খাওয়া উচিত যাতে করে শরীরে প্রোটিন এর অভাব না ঘটে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকে।

এই সময় বেশী পরিমাণ বিশ্রাম করতে হবে এবং বেশী করে ঘুমাতে হবে।

জন্ডিস থেকে মুক্তির উপায়

জন্ডিস হলে কি ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারেঃ

১. রক্ত পরিক্ষা

২. যকৃতের কার্যকারিতা এবং কোলেষ্টরল পরীক্ষা ।

৩. প্রোথোম্বিন টাইম।

৪. পেটের আল্ট্রাসাউন্ড।

৫. রক্তের পরীক্ষা।

৬. প্রস্রাব পরীক্ষা।

৭. যকৃতের বায়োপসি।

জন্ডিস পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর রোগীকে সঠিক ভাবে বিশ্রাম নিতে হবে । বেশি বেশি পানি যেমন, ডাবের পানি, আখের রস, খাওয়ার স্যালাইন ইত্যাদি খাইতে হবে।

রোগীর খাবার দাওয়ার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে। হাতের নখ ছোট রাখতে হবে। পানি বিশুদ্ধ হতে হবে ।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!