কাঁচা হলুদের উপকারিতাঃ আপনাকে যদি সারা জীবন শুধু একটি মশলা ব্যবহার করতে বলা হয়, হলুদের নাম বলুন। এর সোনালী, দানাদার চেহারা দেখতে ভয়ংকর লাগলেও এটি কিন্ত আসলে খুবই ভাল জিনিস। হলুদের উৎপত্তি ভারতে ও ৫০০ খ্রীষ্ট -পূর্বাব্দ থেকেই আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে অকল্পনীয় পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আছে। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলিও আছে। কেউ কেউ তো বলেন এটি বেশির ভাগ ওভার -দা-কাউন্টার ওষুধের চেয়েই বেশি কার্যকরী (ওভার -দা-কাউন্টার ওষুধ- যে ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশন দেখানো লাগে না)।কাঁচা হলুদের উপকারিতা অনেক। Read more >>> কালোজিরার উপকারিতা
আমরা বলছি না হলুদ সর্বরোগের মহৌষধ, কিন্ত গবেষনায় দেখা যাচ্ছে এটি অনেক সমস্যার সম্ভাবনাময় সমাধান, যার সাইড ইফেক্ট নেই বললেই চলে।
কাঁচা হলুদের উপকারিতাঃ
আমরা সবাই জানি হলুদের উজ্জ্বল, সুগন্ধী বৈশিষ্ট্যর কারণে রান্নায় এটি একটি চমৎকার উপাদান। কিন্ত রুপচর্চাও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাওয়া ও ত্বকে মাখা, দুটির মাধ্যমেই হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপকারিতার কারণে এর একটি অপরিহার্য হেলথ প্রোডাক্ট হয়ে ওঠার সব যোগ্যতাই আছে। এই আপাত-জাদুকরী মশলার সবগুলো প্রয়োজনীয় দিক এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা
হলুদে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬ ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন সি থাকে যা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে যে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে, খাবার ঠিকমতো হজম হয়, এসব কথা তো আমরা বহুদিন ধরে জেনে আসছি। আসুন আজ জেনে নেওয়া যাক কাঁচা হলুদের অসংখ্য এমন কিছু গুণের কথা, যার বেশিরভাগটাই আপনার কাছে হয়ত অজানা।
১. কাঁচা হলুদ খাদ্য পরিপাকে কাঁচা হলুদের মধ্যে গ্যাস্ট্রো-প্রটেক্টিভ কিছু গুণ থাকে যা খাবার পরিপাকে সাহায্য করে। ফলে হজমের গোলমাল, গ্যাসের সমস্যার ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ খুবই উপকার দেয়।
২. কাঁচা হলুদ খাদ্য সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলুদে থাকা কারকিউমিনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান থাকায় তা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে খাদ্যনালীকে বাঁচায়। আমরা রোজ যে খাবার খাই তার মধ্যে অনেক সময়ই নানা জীবাণু থেকে যেতে পারে। খাবারে কাঁচা হলুদ বা হলুদ গুড়ো ব্যবহার করলে তা খাদ্যনালীকে ক্ষতিকারক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায় ও খাদ্যনালীর প্রদাহের সম্ভাবনা কমায়।
৩. কাঁচা হলুদ হাড় জোড়া লাগাতে বহু প্রাচীনকাল থেকেই কাঁচা হলুদকে হাড়ের নানারকম রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। হাত বা পা মচকে গেলে চুন-হলুদ লাগানোর কথা তো আমরা সবাইই জানি। এছাড়া কাঁচা হলুদ বেটে ভাঙ্গা হাড়ের জায়গায় লাগালে তা উপকার দেয়। দুধে কাঁচা হলুদ দিয়ে খেলেও তা এক্ষেত্রে উপকার দেয়। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ব্যথা, প্রদাহকে কমায় এবং হাড়ের টিস্যুগুলিকে রক্ষা করে ও ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে সাহায্য করে।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা
৪. কাঁচা হলুদ হাড়ের ক্ষয় রোধে কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন হাড়ের ক্ষয় ও হাড়ের গঠনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখে ও হাড়কে সুস্থ্য ও মজবুত রাখে।
৫. কাঁচা হলুদ ডায়াবেটিসে হলুদ ও হলুদে থাকা কারকিউমিন অ্যান্টি-ডায়াবেটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচা হলুদ ইনসুলিন হরমোনের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৬. কাঁচা হলুদ ত্বকের বয়স কমাতে কাঁচা হলুদ বহু প্রাচীন কাল থেকেই ত্বকের ঔজ্জ্বল রক্ষা করতে ও ত্বকের বয়স কমায়। তাই বিভিন্ন ক্রিমের প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে হলুদ ব্যবহার করা হয়।
৭. কাঁচা হলুদ ক্যান্সার দূর করতে কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন ক্যান্সার দূর করতে সহায়তা করে।
৮. কাঁচা হলুদ মনমরা ভাব কাটাতে কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ আমাদের বিষন্ন মনমরা ভাব, বদমেজাজ, ডিপ্রেশন কাটিয়ে মনকে চনমনে করে তুলতে সাহায্য করে।
৯. কাঁচা হলুদ স্ট্রোকের পরে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া আমাদের স্ট্রোকের সম্ভাবনাকে এক ধাক্কায় অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া কাঁচা হলুদ হার্টকেও বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।