ভালোবাসার গল্প নিঃস্বার্থ ভালোবাসাঃ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম ভালো লাগার মতো জানার মতো ভালোবাসার গল্প নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আশা করছি পড়তে পেরে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। আরো পড়ুন>>> ভালোবাসার গল্প প্রথম দিন
ভালোবাসারগল্প নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
ভালোবাসার গল্প নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
ভালোবাসার গল্প নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
ডাইরী থেকে সাদা কাগজটা ছিঁড়ে কলম দিয়ে বেশ বড় বড় অক্ষরে সুন্দর করে “আমার মৃত্যূর জন্য কেউ দায়ী নয়” লিখে ফেললো অদ্রি। কাগজটা ভাজ করে টেবিলের উপরে রাখা গ্লাসের নিচে রেখে দিলো সো। হ্যাঁ প্রস্তূতি মোটামুটি শেষ, এবার নতুন ব্লেডটা খোলার পালা। নতুন চকচকে ব্লেডটা দেখছে আর ভাবছে একটু পরেই হাতের শিরা কাটবে সে এই ব্লেড দিয়ে। কি মনে করে ব্লেডটা টেবিলের উপর রেখে জানালা দিয়ে শেষ বারের মতো জোসনা দেখতে লাগলো অদ্রি। আনমনে ফিরে গেল পুরোনো স্মৃতিতে। অরণ্যের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো ভার্সিটিতে। প্রথম প্রথম অরণ্যকে ভালো না লাগলেও অরণ্য ছিলো খুব নাছোড়বান্দা ছেলে। সে তার পাগলামো দিয়ে ঠিকই অদ্রির মন জয় করেনিয়েছিল।
তারপর শুরু হলো এ জুটির সম্পর্ক। ভার্সিটিতে এ জুটির সুনামের কোন কমতি ছিলো না। এভাবে দুষ্টূ মিষ্টি খুনসুটি আর একটু ঝগড়া নিয়েই চলছিলো তাদের দিনগুলো। দেখতে দেখতে তিনটি বসন্ত একে অপরের হাত ধরে যে কিভাবে কাটিয়ে দিয়েছে তারা নিজেরাও জানতো না। কিন্তূ অরন্য হঠাৎ করেই কেমন জানি বদলে যেতে লাগলো। যে অরণ্য অদ্রির সাথে ফোনে কথা বলার জন্য অপেক্ষায় থাকতো,আজকাল তাকে কল দিলেই ওয়েটিংয়ে পায় অদ্রি। প্রথম প্রথম বিষয়টা সিরিয়াসলি না নিলেও একসময় অদ্রি খুব কষ্ট পেতো অরণ্যের ব্যবহারে। অরণ্য বলতে গেলে যোগাযোগই বন্ধ করে দেয় অদ্রির সাথে। আর এ যোগাযোগের চির সমাপ্তি হয় আজকে বিকেলে,,,,
অরণ্য তুমি এমন হয়ে গেলে কেন ?
এমন হয়ে গেছি মানে ? কি বলতে চাও স্পষ্ট করে বলো অদ্রি।
তুমি আমাকে অবহেলা করছো। ফোন দিলে ওয়েটিংয়ে থাকো। তুমি তো আগে এমন ছিলে না অরণ্য !
-শুনো অদ্রি সবসময় মানুষকে যে একই রকম থাকতে হবে তা তো নয়। সময় মানুষকে বদলে দেয়। সো, এখানে অপরাধ কি ?
-হ্যাঁ সত্যিই তো এখানে কোনো অপরাধই নেই !
-আমি আসলে তোমাকে সহ্য করতে পারছিনা অদ্রি। আই থিংক আমাদের রিলেশন কন্টিনিউ করা ঠিক না। সো,,,,
-প্লিজ অরণ্য আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
তুমি যেমন আছো তেমনই থাকো তারপরও প্লিজ ছেড়ে যেয়ো না প্লিজ,,,,
-লিসেন অদ্রি, আমার পক্ষে রিলেশন কন্টিনিউ করা পসিবল না ! আমি আর তোমাকে ভালোবাসি না। আই এম এক্সট্রেমলি স্যরি।
-মানে? কি বলছো এসব? মাথা ঠিক আছে তোমার?
-হ্যাঁ ,,,,কারণ ভেবে দেখলাম তোমার সাথে আমার যায় না। তাছাড়া কোথায় আমাদের ফ্যামিলি আর কোথায়,,,,
-থামো অরণ্য,,,,রিলেশন করার আগে মাথায় আসেনি এসব তোমার?
-দেখো আমি মানছি আমার ভুল ছিল বাট আমি সিরিয়াসলি আর পেইন নিতে পারতেছিনা।
-প্লিজ এমন করো না প্লিজ,,,,আমি বাঁচবো না তোমায় ছাড়া অরণ্য প্লিজ !!
সে দিন অনেক অনুরোধের পরও অরণ্য ফিরে আসেনি। খুব কেঁদেছিলো অদ্রি কিন্তূ লাভ হয়নি !
বাসায় আসার পর সোজা নিজের রুমে গেলো। মা অবশ্য কিছুক্ষণ ডাকলেন তাতেও সে পাত্তা দেয়নি।
সিদ্ধান্ত ফাইনাল, আজই পৃথিবীর মায়া ছাড়বে পৃথিবীতে যে ভালোবাসার মত আর কেউ নেই। হঠাৎ মায়ের ডাকে কল্পনা জগৎ থেকে বের হলো অদ্রি। কি মনে করে ভাবলো শেষবারের মতো মা বাবার সাথে দেখা করা উচিত তার। সেই ভেবে দরজা খুলতেই মা বললো,
দেখতো মা ড্রেসটা তোর পছন্দ হয়েছে কিনা?
-হুম খুব হয়েছে মা।
-সেদিন মার্কেটে দেখছিলি ড্রেসটা বারবার। তখন আমার হাতেও টাকা ছিলো না তাই কিছু জমানো টাকা আর তোর বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাজার করতে গিয়ে কিনে আনলাম।
-তুমিও না মা কি যে করো !
-নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে রে মা। আজ সামর্থ্য তেমন নেই বলে কিছুই কিনে দিতে পারিনা। এমন সময় অদ্রির বাবা বাসায় আসলেন। হাতে মনে হচ্ছে মাছের ব্যাগ হবে।
ব্যাগটা অদ্রির মায়ের হাতে দিয়ে বললেন,
-মেয়েটা সেদিন বলেছিলো চিংড়ি মাছ খাবে।
তাই ভাবলাম আজ বেতন পেয়েছি ক’টা চিংড়ি নিয়ে যাই মেয়ের জন্য। মজা করে রান্না করো তো অদ্রির মা যেমনটা অদ্রি পছন্দ করে। অদ্রি এসব দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে। কিছু না বলেই নিজের ঘরে এসে বালিশ চেপে খুব কান্না করলো। ঠিক এমন সময় ছোট ভাইটা এসে জিজ্ঞেস করলো,
-আপু কি হয়েছে তোর ? শরীর খারাপ ?
-নারে ভাই এমনি। কিছু হয়নি আমার।
-কি হয়েছে বলনা রে আপু ! ও বুঝেছি আমি তোর ব্যাগ থেকে টাকা নিয়েছিলাম সেজন্য ? আচ্ছা আমি কাল টিফিন না খেয়ে টাকাগুলো তোকে দিয়ে দিবো আপু। প্লিজ আর কাঁদিস না বিশ্বাস কর আর এমন করবো না। অদ্রি আর সহ্য করতে পারলো না ! হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কান্নার শব্দ শুনে বাবা মা ছুটে এলেন অদ্রির রুমে। অদ্রি শক্ত করে তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।
ভাবতে লাগলো,“ভালোবাসা তো আমার ঘরেই আছে, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আর আমি কিনা মরতে যাচ্ছিলাম এক প্রতারকের জন্য ? আমি মরলে তো ওর কোনো ক্ষতি হতো না। বরং আমার বাবা মা কষ্ট পেতো। আমি না থাকলে তারা কাকে এভাবে ভালোবাসতো।”
গ্লাসের নিচ থেকে কাগজটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে জানালা দিয়ে ফেলে দিলো।
জোছনার আলোয় অন্ধকার ঘরটা আলোকিত হয়ে গেলো, অদ্ভূত সুন্দর লাগছে সবকিছু। জীবন অনেক সুন্দর মনে হচ্ছে অদ্রির। কাগজের টুকরোর সাথে পুরোনো সবকিছু টুকরো টুকরো হয়ে গেলো, শুরু হলো অদ্রির জীবনের নতুন অধ্যায়।