শ্রমের মর্যাদা রচনা

শ্রমের মর্যাদা রচনা

সংকেতঃ ভূমিকা; শ্রম কী এবং শ্রমের ধরণ; শ্রমের ক্ষেত্র; শ্রমের আবশ্যকতা; শ্রমের মহিমা;  ছাত্র জীবনে শ্রমের গুরুত্ব; জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব; উপসংহার।

ভূমিকাঃ “ কোন কাজ ধরে যে উত্তম সেই জন
হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন”
-ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
পৃথিবীর সব জিনিস মানুষের শ্রমলব্দ। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে কঠোর পরিশ্রম করেই বেঁচে থাকতে হয়। আমাদের জীবনে উন্নতি করতে হলে, জীবন-যাত্রার মান বাড়াতে হলে, জীবনকে সুখী করতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। জীবনে অর্থ, বিদ্যা, যশ, প্রতিপত্তি অর্জন করতে হলে তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। কর্ম সাধনার মাধ্যমেই জীবনে সফলতার স্বর্ণ দুয়ারে পৌছানো সম্ভব।

শ্রম কী এবং শ্রমের ধরণঃ মানুষ কোনো কাজ সম্পন্ন করতে যে শারীরিক বা মানসিক শক্তি দিয়ে থাকে তাকে শ্রম বলে। শ্রম সাধারণত দু’ধরনের। যথাঃ মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। পৃথিবীতে জীবন যাপন করতে হলে সব মানুষকেই কম বেশী শারীরিক ও মানসিক শ্রম করতে হয়। প্রত্যেক মানুষই তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিয়ে থাকে।

মানসিক শ্রমঃ মস্তিস্ককে কাজে লাগিয়ে মানুষ তার মেধা মনন দিয়ে যে শ্রম দেয় তাই মানসিক শ্রম। মানুষের জীবনে মানসিক শ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক শ্রম ব্যতীত মানুষের মানসিক বিকাশ সম্ভব নয়।পরিশ্রমী ব্যক্তির মন সব সময় সতেজ হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, দার্শনিক, চিকিৎসক, র্অথনীতিবিদ, ও শিল্পীর পরিশ্রম মূলত মানসিক।

শারীরিক বা কায়িক শ্রমঃ মানুষ তার শারিরীক শক্তি দিয়ে কোনো কাজে যে শ্রম দেয় তাই শারীরিক শ্রম। জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে মানসিক ও শারীরিক দুই প্রকার শ্রমকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

শ্রমের ক্ষেত্রঃ ” Man is the architect of this fortune” অর্থাৎ মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্ত্রা “। এ কর্মমুখর জীবনে মানুষকে নিরন্তর কোনো না কোনো প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করতে হয়। “ Life is not a bed of rose ” জীবন পুষ্প-শয্যা নয়। মানুষকে এ প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হলে একমাত্র শ্রমের সাহায্যেই টিকে থাকতে হবে।

শ্রমের আবশ্যকতাঃ শ্রমই মানুষকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়। শ্রম ব্যতিত পৃথিবীতে কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। পৃথিবীর যে জাতি যত প্ররিশ্রমী, সে জাতি ততো বেশি উন্নত ও সম্পদশালী। যেকোন শ্রমেরই মূল আছে। একমাত্র কঠোর পরিশ্রমই মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌছাতে পারে।

শ্রমের মহিমাঃ ” মর্যাদা শব্দের অভিধানিক অর্থ মূল্যায়ন বা সম্মান করা। অর্থাৎ মানুষের সকল প্রকার শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের প্রতি যথাযথ সম্মান বা মূল্যায়ন প্রদর্শন করাকে শ্রমের মর্যাদা বলে। আমাদের উচিত সব ধরণের শ্রমকে সম্মানের চোখে দেখা। অধ্যাপক লাস্কি বলেছেন, সমাজের সব শ্রেণীর শ্রমজীবি মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে। কুলি-মজুর, চাষী, ডাক-হরকরা, দোকানী, কেরানী ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যক্তিদের শ্রমকে খাটো করে দেখা যাবে না। এই সব শ্রমজীবি মানুষ ছাড়া আমাদের সমাজ এক মুর্হূতও চলবে না। তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্য দিতে হবে।

ছাত্র জীবনে শ্রমের গুরুত্বঃ ছাত্র জীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। অলস, কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্রছাত্রী কখনও বিদ্যালাভে সফলতা লাভ করতে পারে না। একজন পরিশ্রমী ছাত্র বা ছাত্রী স্বল্প মেধাসম্পন্ন হলেও তার পক্ষে সাফল্য অর্জন করা কঠিন নয়। সমাজ বিজ্ঞানী পার্সো বলেন- ”প্রতিভা বলে কিছুই নেই, সাধনা কর, সিদ্ধি লাভ হবেই।”

জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্বঃ শ্রমহীন কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। তাই ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবন পর্যন্ত শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা সমবেত পরিশ্রমের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি। শ্রমের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারি।

উপসংহারঃ পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় হতে হলে, সাফল্যের শিখরে পৌছাতে হলে, বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাড়াতে হলে শ্রমের বিকল্প নেই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!