শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করি শির ভাবসম্প্রসারণ

শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করি শির ভাবসম্প্রসারণ

শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করি শির লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির

মূলভাবঃ মানবসমাজ সত্যিই বিচিত্র। এখানে এমন কিছু লোক বাস করে যারা যত না উপকার করে তার চাইতেও বেশি তার প্রকাশ কামনা করে। উপকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে নিত্য প্রশংসার জন্যই যেন তার তথাকথিত উপকার।

ভাবসম্প্রসারণঃ উদার প্রকৃতির মানুষ কখনো পরের উপকার করার জন্য গৌরববোধ করে না; বরং নিচু প্রকৃতির মানুষ খুব ছোটখাটো উপকারের জন্যও গর্ববোধ করে, তা প্রচার করে বাহবা নিতে চায়। দিঘির বুকে বিরাজমান শৈবাল থেকে মানব চরিত্রের এ সংকীর্ণতার দৃষ্টান্ত অনুধাবন করা যেতে পারে। শৈবালের দেওয়া এ অতিরিক্ত এক বিন্দু জল কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না- তবু তার অহংকার প্রকাশ করে নিজের সংকীর্ণ হৃদয়ের পরিচয় দেয়। শৈবালের মতো মানবসমাজেও এমন সংকীর্ণমনা, হীনচেতা মানুষের অভাব নেই, যারা পরের দাক্ষিণ্য দুহাতে গ্রহণ করেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না; বরং পরের সামান্য উপকার করে সে উপকারকে মহৎ দান বলে সদম্ভে ঘোষণা করতে থাকে। কেননা তার ভয় পাশে তার উপকারের মূল্য বুঝি ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তু যিনি মহৎ ও যথার্থ পরোপকারী, পরের উপকার করে তিনি কখনো দম্ভ প্রকাশ করেন না। আত্মপ্রচারেও তাঁর কোনো আগ্রহ নেই। সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবেই তিনি মানুষের উপকার করেন, কোনো প্রতিদানের আশা কখনো করেন না। মানব কল্যাণই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। পরোপকারের জন্যই তাঁর জীবনটা উৎসর্গীকৃত।

মন্তব্যঃ প্রকৃত মানুষ সে-ই, যার আত্মতৃপ্তি নিহিত পরোপকারের মধ্যে। মহৎ ও উদার প্রাণচেতনার ধারক এমন মানুষ বর্তমানে কম। আমাদের এই চেতনাকে ধারণ করেই নিজের জীবনকে সাজাতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!