যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাবঃ জগতে কোন জিনিসই অবহেলার বস্তূ নয়। অনেক তুচ্ছ ও অবহেলিত পদার্থের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে মহামূলবান বস্তুূ ।
সম্প্রসারিত-ভাবঃ অন্তসারশূন্য ছাইয়ের নিচে অমূল্য রতন পাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। কোন কিছুর উপরিভাগের দৈন্য দশা কিংবা সৌন্দর্যহীনতা দেখে সম্পূর্ণ জিনিসটাকে তুচ্ছ ভাবা ঠিক নয়। কারণ অনেক সময় অতি সাধারণ জিনিসের ভেতরেই অতি অসাধারণ বস্তূ লুকায়িত থাকে।
আমাদের জগৎ-সংসারে মানুষ সাধারণত সোনার হরিণ ধরার মত মহামূল্যবান জিনিসের পেছনে প্রতিনিহিত ধাবমান। তারা হাতের কাছের সাধারণ জিনিসকে তুচ্ছ জ্ঞান করে । অথচ এ সাধারণ জিনিসগুলোর ভেতরেই অসাধারণ জিনিসের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
মানুষের বাহ্যিক অবয়ব, পোশাক পরিচ্ছদ অতি সাধারণ হলেও অনেক সময় এসবের ভেতরে বসবাস করে অতি অসাধারণ মানুষ। এ প্রসঙ্গে ড. লুৎফর রহমানের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য :
“ মানুষ যতই ছোট হোক, যতই সে অজ্ঞাত হয়ে থাকুক, তার মধ্যে অসীম ক্ষমতা, অনন্ত প্রতিভা ঘুমিয়ে আছে- অনুকূল পরিবেশ পেলে তার ভিতরকার রূপ ও মহিমা অনন্ত শিখায় ফুটে উঠবে ।”
সুতরাং বাহ্যিক চেহারা দিয়ে কোন কিছুর প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় না। পথের পাশে পড়ে থাকা মানবশিশুকে আমরা আজ ঘৃণার চোখে দেখলেও আগামীতে সে-ই হতে পারে ইতিহাস বরেণ্য ব্যক্তিত্ব । এরুপ নজির ইতিহাসে মোটেও বিরল নয় । তাই appearances count এই আধুনিক উক্তি সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। শুধু চোখে দেখলেই সব কিছু দেখা যায় না, চোখকে দেখতে দিয়ে মনকেও বোঝার সুযোগ দিতে হবে। ছাই দেখে তাকে তুচ্ছ ভাবা সব সময় ঠিক নয়। তার ভেতরে অমূল্যরত্ন থেকেও যেতে পারে। খোঁজ করে দেখা চাই । জীবনে চলার ক্ষেত্রে অনেক কিছু চোখে পড়বে যদি মনে হয় চোখে সুন্দর লাগে নাই তাই বলে কি সেই জিনিসকে ছোট করে দেখা ঠিক না কারন সেই ছোই জিনিসই হয়তো একদিন অনেক বড় কিছু হবে । কে কখন কি পর্যায়ে জীবনে সফল হয় তা আগে থেকে বলা ঠিক নয় অথবা ভাবা ঠিক নয় ।
মূলভাবঃ আমাদের মানব সমাজে এমন অনেক লোক আছে যাদেরকে তুচ্ছ মনে করা হলেও তারা বিদ্যা-জ্ঞানে এবং চারিত্রিক মাধুর্যে মহীয়ান। তাই কারো বাহ্যিক আড়ম্বরে বিভ্রান্ত না হয়ে তার সত্যিকার স্বরূপ উদঘাটন করা উচিত। এ পসঙ্গে কবি নজরুল ইসলামের নিচের পঙক্তি দুটো স্মরণযোগ্য:
“ ওকি চন্ডাল ! চমকাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব
ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।”