লাইলাতুল বারাতের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য এবং নফল ইবাদত
লাইলাতুল বারাতের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য এবং নফল ইবাদত
লাইলাতুল বারাতের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যঃ লাইলাতুল বারাত অর্থ ভাগ্য রজনী। অন্য কথায় একে শবে বরাত বলা হয়। এ রাত্রের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ ধর্মীয় ভাষায় ফযীলত অন্যান্য মাস থেকে কম নয়। অধিকন্তুূ কোন কোন বুজুর্গান ও মাশায়েখগণের মতে অত্যধিক। কারণ স্বরুপ তাঁরা এ কথাও বলেছেন যে, এ মাসের ১৪ দিবাগত রাত সৃষ্টিকুলের হায়াত মউত, রিযিক, দৌলত, উন্নতি অবনতি, সুখ-দুঃখ, উথান-পতন, ভাল-মন্দ, রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি আগামী এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়। একমাত্র লাইলাতুল ক্বদর ব্যতীত এর সমতুল্য আর কোন মাস নেই। তাই সহজে অনুমান করা যায় যে, এ মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য তথা ফযীলত ও বুজুর্গী অত্যন্ত বেশি।
এ রাতটির সম্মান ও কদর করতে হলে আমাদের প্রত্যেক মুসলমান মো’মীনের একান্ত উচিত সন্ধা থেকে সোবহে সাদেক পর্যন্ত সারারাত ইবাদত বন্দেগী তথা কোরআন তেলাওয়াত, তসবীহ তাহলীল ও তওবা এস্তেগফার, দোয়া, দরুদ এবং নফল নামাযের মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়া। গরীব মিশকীনদিগকে দান খয়রাত করা, তাদিগকে ভোজে আপ্যায়িত করা। ইত্যাদি ইবাদতের শামিল, এতে অত্যধিক সওয়াব হাসিল হয় এবং দোযখের কঠিন আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কিন্তুূ ইবাদতের নামে হিন্দুদের দেওয়ালী উৎসবের ন্যায় এ রাত্রে অসংখ্য মোমবাতি বা ব্যয়বহুল মশাল জ্বালিয়ে উৎসব করা, একে অন্যের গায়ে রং ছিটিয়ে আমোদ উৎসব করা সর্ম্পূণরূপে ইসলাম ধর্ম বিরোধী কাজ এবং অপব্যয়। কোরআন পাকে আছে, “ আল্লাহ তাআলা অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না। “ আর এতে প্রশস্ত হয়ে যায় জাহান্নামে যাওয়ার রাস্তা। আর এসব কার্যকলাপ হচ্ছে বেদাত। ‘আনিসুল ওয়ায়েজীন’ কিতাবে নবী করীম (সাঃ) – এর বাণী উদ্বত আছেঃ নতুন যেকোন প্রথা বলতেই বেদাত। আর বেদাত বলতেই গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা এবং সকল প্রকার পথভ্রষ্টতাই জাহান্নামের পথ প্রদর্শক।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) থেকে রেওয়ায়েত আছেঃ রাসূলে আকরাম (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ হে বিশ্ববাসী বান্দাগণ ! তোমরা শা’বান মাসের ১৫ তারিখে রাত্র নিদ্রা পরিত্যাগ করতঃ ইবাদতে লিপ্ত হও। কেননা এ রাত্র অত্যন্ত ফযীলত ও বরকতময়। এ রাত্রে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, “ তোমাদের মধ্যে কেহ কি ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ ? আমি অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেব ।”
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছেঃ নবী পাক(সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায়, সে যেন শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রে এবাদত -বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে। তাহলে করুণাময় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নামের অগ্নি হারাম করে দেবেন।
হাদিস শরীফে আরও আছেঃ আমাদের প্রিয় নবী হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয়ই শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রিতে (ইবাদতকারীকে) আল্লাহ তাআলা বনী কালব, বনী রবী মুদার গোত্রের ভেড়া ও বকরীর পশমের সংখ্যার সমপরিমাণ গোনাহগার উম্মতের পাপ রাশি ক্ষমা করে দেন। কথিত আছে যে, আরবের এই তিনটি বিখ্যাত গোত্রের প্রত্যেকটি গোত্র ৩ থেকে ২০ হাজারের মত ভেড়া-বকরী পালন করত।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরও এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি ১৫ শা’বানের রাত্রিকে জীবিত রাখবে অর্থাৎ নিদ্রা ও আলসা ত্যাগ করে ইবাদত বন্দেগীতে নিমগ্ন থাকবে, পরম করুনাময় আল্লাহ তাআলা তাকে রোজ কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত রাখবেন ( অর্থাৎ মৃত্যুর পরও তার আমল নামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে। )
হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত আছে, নবী পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ করুনাময় আল্লাহ তাআলা ১৫ শা’বানের রাত্রিতে ইবাদতকারী বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তুূ শরাবী, যেনাকার (পুরুষ, স্ত্রী ) , মাতা- পিতার অবাধ্য ও কষ্ট প্রদানকারী, গণ, সুদখোর, যাদুকর, কৃপণ ইত্যাদিকে ক্ষমা করবেন না। (তবে হ্যা এসব ব্যক্তি খালেছ দিলে তওবা করলে ক্ষমা পাওয়ার আশা করা যায়)। কেননা, আল্লাহ তাআলা পাক কোরআনে ঘোষণা করেছেনঃ
উচ্চারণঃ কুল ইয়া ই’বা দিইয়াল্লাযীনা আছরাফু আ’লা আনফুছিহিম লা তাক্বনাতু মিররাহমাতিল্লাহে। ইন্নাল্লাহা ইয়াগফেরুয যুনুবা জামীআ’’ ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহীম।
অর্থঃ বল, হে আমার বান্দাগণ ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ তারা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ (তোমাদের) সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন । তিনি তো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু । সূরা ঝুমার; আয়াত নং-৫৩ )
আরোও একটি হাদিস শরীফে আছেঃ বিশ্বনবী (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ একদা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এসে আমাকে বলেছেন, হে আল্লাহর হাবীব (সাঃ) ! আপনি বিছানা ছেড়ে উঠুন এবং আল্লাহ পাকের দরবারে ক্ষমা পার্থনা করুন । আল্লাহ তাআলা এ রাত্রে (১৫ শা’বানের রাত্র) স্বীয় বান্দাদের জন্য একশত রহমতের দরজা খুলে দেন। অতএব আপনি এ বুজুর্গ রাত্রে স্বীয় উম্মতগণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কিন্তুূ মোশরেক, শরাবখোর, সুদখোর, ঘুষখোর, যেনাকার, গণক, যাদুকর, বখীল, ইত্যাদির জন্য প্রার্থনা করবেন না। কারণ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ক্ষমা করবেন না, এদেরকে জাহান্নামের কঠিন আযাবে নিমজ্জিত তাদেরকে ক্ষমা করবেন না, এদেরকে জাহান্নামের কঠিন আযাবে নিমজ্জিত করবেন।
এই মাসে (শা’বান মাসে) রমজান মাসের রোযা রাখার প্রস্তুূতি হিসেবে কমসে কম তিনটি রোযা রাখবে। ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ অথবা ১৪, ১৫ ও ১৬ তারিখ; তা হলে ইহুদীদের বিরুদ্ধাচরণ করা হবে। তারা মাত্র একটি রোযা রাখে।
শবে বরাত তথা লাইলাতুল বরাতের নফল ইবাদত
শবে বরাত তথা লাইলাতুল বরাতের নফল ইবাদতঃ এই রাতে নফল নামায, কোরআন তেলাওয়াত, তসবীহ তাহলীল, দোয়া-দরুদ পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলত ও বরকতময়। এ রাত্রে (সন্ধার সময় ) গোসল করা অতি পূর্ণের কাজ। এ রাত্রে এশার নামায আদায় করে লাইলাতুল বরাত নফল নামাযের নিয়তে যথাসাধ্য বেশি পরিমাণ নামায পড়বে। ধরা বাঁধা রাকাতের পরিমাণ নেই । তবে যত বেশি পড়বে ততই বেশি সওয়াব লেখা হবে। ব্যবসা-বানিজ্যে আমরা যেমন বেশি বেশি লাভের চেষ্টা করে থাকি, তেমনি পরকালে সুখে শান্তিতে থাকার জন্যও বেশি বেশি করে নফল ইবাদত করা আমাদের উচিত।
নবী পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ ১/ যে ব্যক্তি শবে বরাতে আমার উপর ১০০(একশত) বার দরুদ শরীফ পাঠ করবে , হাশরের দিন আমি তাকে সকলের আগে শাফায়াত করব।
২/ ইবাদতের নিয়তে যে ব্যক্তি শবে বরাতের সন্ধাকালে উত্তমরুপে গোসল করবে, তার গোসলের প্রতি ফোঁটা পানির বিনিময়ে সাত শত রাকাত নফল নামাযের পূণ্য লাভে ধন্য হবে।
৩/ এ রাত্রে দু’দু রাকাত করে নফল নামাযের নিয়তে যে ব্যক্তি ১২ রাকাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা এখলাস ১৫ বার করে পাঠ করে, সে বিশেষ সওয়াবের অধিকারী হবে।
৪/ হাদীস শরীফে অন্য এক বর্ণনায় আছে, দ্বীনের নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি শা’বান মাসের ১৫ তারিখের দিনে আমার উপর ১০০ শত বার দরুদ শরীফ পাঠ করে আর রাত্রেও একশত বার দরুদ শরীফ পাঠ করে , দয়াময় আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন এবং দোযখের আগুন তার জন্যে হারাম হয়ে যাবে।
শবে বরাতের নামায নফল এবং দু’ দু’ রাকাত করে পড়াই সর্বোত্তম। এক নিয়তে নফল নামায রাত্রে ৮ রাকাত এবং দিনে ছয় রাকাত করে পড়ার বিধান কেতাবে রয়েছে।