বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা
আরো পড়ুন >>> মুজিব বর্ষ
সংকেতঃ সূচনা, বঙ্গবন্ধুর শৈশব, বঙ্গবন্ধুর পড়াশোনা, বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা, বঙ্গবন্ধুর নৈতিকতাবোধ, উপসংহার ।
সূচনাঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালি জাতির জন্য এক মহান ব্যক্তি । যিনি কিনা যত দিন বেঁচে ছিলেন তত দিন শুধু সংগ্রাম করে গিয়েছেন বাঙালিদের অধিকার আদায়ের জন্য । তিনি ছিলেন এক সাহসী নেতা।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী অনুপ্রেরণায় বাঙালিরা যুদ্ধে জয় লাভ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর শৈশবঃ বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুষমামণ্ডিত টুঙ্গিপাড়ায়। টুঙ্গীপাড়া গ্রামেই শেখ মুজিবুর রহমান ধনধান্যে পুষ্প ভরা শস্য শ্যামলা রূপসী বাংলাকে দেখেছেন। তিনি আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে লালিত ও বর্ধিত হয়েছেন।তিনি দোয়েল ও বাবুই পাখি ভীষণ ভালোবাসতেন। বাড়িতে শালিক ও ময়না পুষতেন। আবার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটতেন। বানর ও কুকুর পুষতেন বোনদের নিয়ে। পাখি আর জীবজন্তুর প্রতি ছিল গভীর মমতা। মাছরাঙা ডুব দিয়ে কীভাবে মাছ ধরে তাও তিনি খেয়াল করতেন খালের পাড়ে বসে বসে। ফুটবল ছিল তার প্রিয় খেলা। এভাবে তার শৈশব কেটেছে মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে আর বর্ষার কাদা পানিতে ভিজে। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো।
বঙ্গবন্ধুর পড়াশোনাঃ বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান আদালতে চাকরি করতেন । তার মাতা সায়েরা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। পিতা-মাতার স্বপ্ন ছিলবড় হয়ে তিনি একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হবেন। টুঙ্গিপাড়ার সেই শেখ বাড়ির দক্ষিণে ছিল কাছারি ঘর। এখানেই মাস্টার, পন্ডিতও মৌলভী সাহেবদের কাছে ছোট্ট মুজিবের হাতেখড়ি। একটু বড় হলে তাদের পূর্ব পুররুষদের গড়া গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়েতার লেখাপড়া শুরু হয়। এরপর পিতার কর্মস্থল মাদারীপুরের ইসলামিয়া হাইস্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে কিছুদিন লেখাপড়া করেন।
পরবর্তীতে তার পিতা বদলি হয়ে গোপালগঞ্জে যোগদান করলে তিনি গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন তিনি। পছন্দ করতেন ইতিহাসের বই।এসব কারণে প্রধান শিক্ষক গিরিশ চন্দ্রসহ সকল শিক্ষকের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিব। শিশুকাল থেকেই শেখ মুজিবছিলেন পরোপকারী এবং অন্যায়ের প্রতিবাদী। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় যেমন সহযোগিতার হাত বাড়াতেন-তেমনি কারো প্রতিঅন্যায় আচরণ দেখলে প্রতিবাদ করতেন। মাত্র তের বছর বয়সে প্রতিবাদের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসাঃ বঙ্গবন্ধু ছোটদেরকে ভীষণ ভালোবাসতেন। কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর ছিল তাঁর প্রিয় সংগঠন। কৈশোরে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কচিকাঁচার আসরে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ দিনটি তিনি কাটিয়েছেন এই সংগঠনের ভাই-বোনদের মাঝে। তাঁর জন্মদিনটিকে এখন আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করি। শিশুদের কাছে দিনটি আনন্দ-খুশির।
বঙ্গবন্ধুর নৈতিকতাবোধঃ বঙ্গবন্ধু শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। শৈশব থেকে তত্কালীনসমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা নিপীড়ন দেখেছেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার। আর পড়শি দরিদ্র মানুষের দুঃখ, কষ্ট তাঁকেসারাজীবন সাধারণ দুঃখী মানুষের প্রতি অগাধ ভালবাসায় সিক্ত করে তোলে।
বস্তুতপক্ষে সমাজ ও পরিবেশ তাঁকে অন্যায়েরবিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি কোনো শক্তির কাছে— সে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পনকরেননি; মাথানত করেননি। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক একবার তাঁদের স্কুল পরিদর্শনেএসেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের স্কুল মেরামতের জন্য অর্থবরাদ্দ করেন।
উপসংহারঃ দেশের মানুষের জন্য দেশের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান কখনো অস্বীকার করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের এক মহান ব্যক্তি এবং সাহসী নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের শিখিয়েছেন কিভাবে বুক উচু করে বেঁচে থাকতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার সাহস শিখিয়েছেন।