অর্থই অনর্থের মূল ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাবঃ স্রষ্টা মানুষকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, অপরদিকে পার্থিব জীবনে মানুষের শ্রেষ্ঠ সৃস্টি অর্থ। তাই অর্থ মানুষের নিয়ন্ত্রিত, তথা অর্থকে সে পরিচালিত করে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তুূ মানুষ যখন অর্থের কাছে জিম্মি হয়ে অর্থের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখনই জগৎসংসারে অর্থ অনর্থের মূল হয়ে দাড়ায়।
সম্প্রসারিত-ভাবঃ জীবন ধারনের জন্যে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। পার্থিব জীবনে অর্থ বা বিত্তই মানুষের একান্ত কামনা। অর্থ বা সম্পদের মোহে মানুষ জীবনসংগ্রামে লিপ্ত হয়। মানুষ তার কাঙ্খিত অর্থ উপার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করে এবং নানা প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলা করে। অর্থ মানুষের আজীবন প্রয়োজন মিটায় বলে অর্থ ছাড়া জীবন অর্থহীন বা মূল্যহীন বলে বিবেচিত হয়। তাই সাড়া জীবন মানুষ অর্থের পিছনে ছুটে । বর্তমান পৃথিবীতে একমাত্র মাপকাঠি দ্বারাই প্রতিপত্তি ও সম্মান নির্ণীত হয় বলে, কী করে অর্থ উপার্জন করা যায় তার জন্যে মানুষের চেষ্টার অন্ত নেই । বিপদে-আপদে, আনন্দ-উৎসবে, জন্ম-মৃত্যুতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অর্থের প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে মীর মোশাররফ হোসেনের উক্তিটি স্মরণযোগ্য, “ জন্মান্তে টাকা, জীবনে টাকা, জীবনান্তেও টাকা, জগতে টাকারই খেলা “
অপরপক্ষে, পৃথিবীর সকল অমঙ্গলের জন্যে দায়ী আবার এই অর্থই। অর্থই জীবনকে প্রবাহিত করে, আবার অর্থই জীবনকে মৃত্যূর দিকে ধাবিত করে, তাই অর্থই জীবন, অর্থই মৃত্যু। অর্থের লোভে নীতিবর্জিত হয়ে মানুষ অহরহ নানা দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়। অর্থের লালসা মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটায়।
অর্থের লোভেই চরিত্রহীন হয়ে মানুষ সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়। পৃথিবীর সকল দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও অশান্তির মূল্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত অর্থ। অর্থ-সম্পদের স্বার্থেই রাষ্ট্রে যুদ্ধের উন্মাদনা জাগে, শ্রমিক-মালিকে বাধে মতবিরোধ, ভাইয়ে-ভাইয়ে শুরু হয় চরম শত্রূতা। অর্থের লোভেই মানুষ মানুষের সাথে বেইমানি করে লেনদেনে চুক্তি অসীকার করে । তাই জগতের সব অশান্তি ও অর্থের মূলে রয়েছে অর্থ। অর্থের লোভেই মানুষ নৈতিকতা বিসর্জন দেয়। অর্থই মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। তাই মীর মোশাররফ হোসেন দুঃখ করে বলেছেন,“হায়রে পাতকী অর্থ !
তুই জগতে সকল অনর্থের মূল।”
মূলভাবঃ সুষ্ঠূ সমাজজীবন ও স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্যে অর্থের প্রয়োজনীতা অনিস্বীকার্য। কিন্তুূ অর্থ যেন অনর্থের মূল না হয় তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। সকল অনর্থের মূল হিসেবে বিবেচিত অর্থ সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, অর্থের সুষ্ঠূ ব্যবহারই এর মর্যাদা বৃদ্ধি করে।